Saturday, July 01, 2006

Boro rastar upor ekta truck by mahbub morshed

বড় রাস্তার উপরে একটা ট্রাক

আলো-অাঁধারি সম্পূর্ণটা কাটে নাই৷ সুরুচির ছেঁকে ফেলা চা-পাতি, ডেনিশ কনডেন্সড মিল্কের ছয়সাতটা এক সাইড খোলা কৌটা, কাপের ভাঙ্গা ডানা, গ্লাসের টুকরা, কাপ পিরিচ ধোয়া ময়লা পানি আর পরাটা ভাজার ছনাত্‍ আওয়াজের তিন হাত উপরে কেবল সূর্যের খানিক লালচে আভা৷ উল্টা দিকে মতলব বোডিং৷ মাঝে শিউলি ফুলের মতো বড় রাস্তা৷ বোডিং-এর সামনে তিনটা টাটা, একটা বেডফোড, দুইটা আশোক লেল্যান্ড৷ ড্রাইভার-হেলপার কে কোথায় শুয়েছে, সুরুচি (হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্ট) থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় না৷ প্রতিদিনের মতো ট্রাকের আড়ালে ঢাকা পড়েছে মতলব বোর্ডিং-এর বেঞ্চটি৷ রাতভর ড্রাইভর, হেলপারদেরকে টানাটানি করে এখন বোর্ডিং-বয় দু'জনের চোখে ঘুম৷ বেঞ্চে বসে ঢুলতে ঢুলতে সেখানেই কোনোরকমে কাত হয়েছে ওরা৷ ওদের বেড়ালের মতো চার ব্যাটারি টর্চ দু'টি মাটিতে দাঁড়িয়ে অদূরে হাঁটু ভেঙে বসে থাকা সোলেমানের দিকে তাকিয়ে আছে জুলজুল করে৷ রাস্তা পেরিয়ে সুরুচি থেকে দেখলেও বোঝা যায়, ঝিমাচ্ছে না বরং একটু রেস্ট নেয়ার জন্য এই বসা৷ সম্ভবত মশা অথবা খারাপ স্বপ্নে পৌনে এক ঘন্টা আগে তার ঘুম ভেঙে গেছে৷ তখন থেকে বেডফোর্ডের বডি ধোয়া এবং ওয়াটার ট্যাংক ভরাবার জন্য যতোবার সুরুচি টু বেডফোর্ড সে আপ-ডাউন করেছে ততোবারে বাবুর্চিদের কাছে তার একটা পরিচিতি তৈরি হয়ে যাবার কথা৷ শেষবার সে ছাই আনতে চুলার কাছেও গিয়েছে৷ আঙুলের মাথায় ছাই নিয়ে দাঁতে ঘষা দিয়েছে তিনবার৷ হাগা-মুতা সেরেছে মহাস্থান টিম্বার মার্টের পিছনে ঝোঁপ ঝোপ জায়গায়৷ অতদূর থেকেও বোঝা যায় এক্ষুনি আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়াবে সে৷ একটা হাইও তুলতে পারে৷ সত্যই যখন সে উঠে দাঁড়াল তখন বোঝা যায় ভেতরে কোথায় যেন কুয়াশার মতো তাড়া৷ বোর্ডিং-এর ছাদ থেকে দেখলে বেডফোর্ডের বডিতে ত্রিপল বিছিয়ে এবং মশারি টাঙিয়ে শুয়ে থাকা সোলেমানের ওস্তাদকে দেখা যায়৷ তার শুয়ে থাকার মাঝেও এক ধরনের তাড়া আছে৷ গত রাতে তিনটার দিকে এখানে পৌঁছে বাকি সময়টুকুর জন্য বোডিং-এ ওঠে নাই তারা৷ তড়িত্‍ ব্যবস্থা করে দু'জনে ট্রাকেই শুয়ে পড়েছে৷ এখন সোলেমান যেভাবে কেবিনের পা-দানিতে পা ঠেকিয়ে বডিতে উঠে পড়েছে তাতে যে কেউ বুঝতে পারবে, সে এখন তার ওস্তাদকে ঘুম থেকে জাগাবে৷ এহ হে... রে...এ আইজ যে ওস্তাদক ঢুলানিতে শুতি থাকা বাচ্চা ছাওয়ার মতন নাগে৷ দ্যাখো কেনে কী পরিমাণ সাইড দিয়া শুতছে৷ চলতি রোডত ফির উল্টা খাসলত ওমার৷ যতয় বাপের বেটা হন সাইড নেই৷ ওস্তাদ দয়া করলে না একনা সাইড পাইমেন৷ পারে না কি হে সোলেমান, ওমাক কাটাবার পারে নাকি কেউ? আছে নাকি কেউ? তাও আছে বটে একজনা৷ চোরের ওপর বাটপার আছে, নাকি বাহে৷ সেই ব্যক্তি হইল তোমার এই সোলে- সোলেমান৷ সেই দিনের কথা চিন্তা কর- যে দিন নিজের বেডফোর্ডখান নিয়া সে ওস্তাদের পিছনত নাগছে৷ পাগলা কুত্তার মতোন হর্নে হাত চাপি খালি গিয়ার মারতেছে৷ একবার ব্যাক সাইড মিররে ওস্তাদ তাক দেখেও বোঝায়৷ যায় নাকি ওস্তাদ, সোলেমানক চিনা যায় আইজ৷ উল্টা দিক থাকি এইসমে একটা বাস আসতেছে, ধরো৷ 'চুতমারানি' বলে একনা সাইড দিয়া সোলেমান ফির গিয়ার মারছে৷ ৬৯ গজটাক দূরে মানুষের কনুইয়ের মতোন রাস্তার এখান খাড়া ভাঁজ৷ হর্নে কিন্তু সোলেমানের হাত চাপি ধরায় আছে৷ আর ওস্তাদ এইসমে স্টিয়ারিং ঘুরায় না৷ স্টিয়ারিং ঘুরায় না কেন হে মানুষটা৷ হুটহাট গিয়ার কমায় সে৷ আর ওস্তাদ? সোত যেংকা পাথরত ধাক্কা খায় সেংকা করি একটা গগন শিরীষের গাছত ধাক্কা খায়া চুপ মারে ওস্তাদের ট্রাক৷ স্টার্ট বন্ধ করি ওস্তাদ, ওস্তাদ ডাকতে ডাকতে তার দিকে ছুটে যায় সোলে৷ ওস্তাদ- ও ওস্তাদ! উঁ বলে একটু পাশ ফেরে ওস্তাদ৷ সেভাবে দশ সেকেন্ড থেকে বালিশের নিচে হাত চালায় ঘড়ির খোঁজে৷ বাম হাতের পিঠ দিয়ে চোখ ঘষে পাতা একটু খুলে সময় দেখে৷ টর টর করি দেখিস কী৷ এত বেলা হয়া গেল ডাকাইস নাই৷ নাকত তেল দিয়া নিন আলছিলু নাকি৷ খেকিয়ে ওঠে৷ তারপর ট্রাক থেকে নেমে যায়৷ বোর্ডিং-বয় দু'জনের ঘুম ভেঙে গেছে ততোক্ষণে৷ অযথাই ঘনঘন চোখে-নাকে বার বার আঙুল চালায় তারা৷ ওদের গা টাটানো হাসি দেখলে বোঝা যায় ওরা সোলেমানের এই অপদস্থ হওয়া গলা বাড়িয়ে খানিক দেখেছে৷ ওদের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণে ওস্তাদের মশারি চাদর গুটিয়ে সাইড ব্যাগে পুরে দেয় সে৷ তারপর কেবিনে ছুঁড়ে দেয় ব্যাগটা৷ মিনমিনে শয়তান ছেলে দু'টা তখনো হাসছে৷ বেডিংওত না থাকলে ওমার হোল জ্বলবেয়৷ থাকে বা কায়, পাঁচ টাকার বোডিংওত বিশ টাকা নাইট৷ টাকা কি রাস্তার ধুলা নাকি হে? ট্রাকের চোদনে উড়ি বেড়ায়৷ রাইতে বোর্ডিংওত থাক ত খুব ভাল৷ ওস্তাদ ওস্তাদ করবে৷ ট্রাক দেখবে৷ চাইলে নিজের বইনটাকও আনি দেয়৷ না ওঠো ত ওস্তাদ বাঁয়ে রাখেন- ওস্তাদ পিছনে রাখেন৷ আরো ট্রাক দাঁড়াইবে৷ চুতমারানি! ট্রাকতো তোমার শেরাটন হোটলে থাকবার জন্যে কাতারে কাতারে দাঁড়াইবেয়৷ ছেলে দুইটার দিকে তাকিয়ে হৈ দেয় সোলেমান৷ কিন্তু ওরা এবার তাকে পাত্তা না দিয়ে বোর্ডিং ঘরের দিকে এগিয়ে যায়৷ সুরুচির দিক থেকে হেঁটে আসা ওস্তাদের নাদুস-নুদুস পা ফেলা, শব্দ করে নুতু ফেলা এবং কেবিনে উঠে আগরবাতি জ্বালানো দেখে সোলেমান কেন গাড়ির চাকারাও বুঝতে পারে রাস্তার উপর আর একটা দিন শুরু হতে যাচ্ছে এখন৷ লা-ইলাহা ইল্লা আস্তা সুবহানাকা ইনি্নকুনতু মিনায যোয়ালেমিন বলে ওস্তাদ যখন চাবি ঘুরিয়ে পিকাপ চেপে ধরে তখন ঘুমন্ত নেড়ি কুত্তার মতো কাঁই কাঁই শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করে ইঞ্জিন৷ পরক্ষণেই লাত্থি খেয়ে এক ধাক্কায় রাস্তায় সওয়ার হয়৷ ফটাফট মহাস্থান, পুণ্ড্রবর্ধন পেরিয়ে রংপুর রোডের উপর দিয়ে রংপুরের বিপরীত দিকে ছুটে যায়৷ এখন বোর্ডিং-এর ছেলে দু'টা যদি রাস্তায় গলা বাড়িয়ে ট্রাকটাকে এক নজর দেখতে চায় ত আরেকটা দ্রতগামী ট্রাকে উঠে পড়া ছাড়া অন্য উপায় নেই৷ মাশাল্লা রাস্তা এলাও ফাঁকা৷ কোনো বাস কার নাই৷ তামরা সবায় টার্মিনালের কোলাত বসি দুধু খাইতেছে৷ রাস্তাত খালি দুই তিনটা রিকশা৷ হইলে কী, এমার জন্যে সোলেমানক ধুপধাপ করা লাগে বেশি৷ এ পাকে ফির ওস্তাদক দ্যাখো৷ স্টিয়ারিং দ্যাখো৷ স্পিডোমিটার, ফুয়েলমিটার হাবিজাবি যন্ত্রপাতির কাঁপন দ্যাখো, মনে কয় একশ তুলছে৷ এখন কেবিনে বসে সোলেমানের জায়গা থেকে দেখলে সামনের সাইকেল অলার প্রতি তার বিরক্তিটা স্পষ্ট বোঝা যায়৷ সাইকেল অলা সোলেমানের হৈ হৈ আর ধুপধাপ আওয়াজে রা করে না বরং রাস্তার বাঁয়ে যথেষ্ট জায়গা রেখে এগিয়ে যেতে থাকে৷ রাস্তা ঘেঁষা মানুষ বলেই এমন বিরক্ত করে এরা৷ চুতমারানি বলে এই নবাবজাদাকে ওভারটেক করে বিড়ি চায় ওস্তাদ৷ বিড়ি ধরানোর সময় ওস্তাদ যদি বায়ে তাকিয়ে একবার নজর করতো, বুঝতে পারতো তারও নেশা পেয়েছে৷ কিন্তু ওস্তাদের সামনে বিড়িতে অতিরক্তি একটা টানও দেয় না সোলে বরং ধরানোর জন্য যতোটুকু দরকার ততোটুকু টান দিয়ে ১১৪৩ এলফোর নাম্বারের হারাগাছে প্রস্তুত বিড়িটি ওস্তাদের দিকে এগিয়ে দেয়৷ এরপর কেবিনের দরজা খুলে বাহির থেকেই বন্ধ করে বডিতে উঠে পড়ে সে৷ খুব দ্রুত বিড়ি ধরায়৷ দ্রুততা সত্ত্বেও পিছনের ট্রাকে কলার উপর বসে থাকা লোক দু'জন তার নেশার তীব্রতা বুঝতে পারে না৷ মাথা ঘুরিয়ে সোলেমান বোঝে তীব্র বাতাসের তোড়ে এখনো এরা চোখ খোলা রাখতে শেখেনি৷ এ সময় ওস্তাদ একটা গিয়ার মারে আর সোলেমান কেবিন চাপড়ে তাকে উত্‍সাহিত করে করে বহুদূর এসে পড়ে৷ সে যদি এখন আবার কাঁচা কলা ট্রাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই ট্রাকের হেলপারদেরকে উপহাস করতে চায় তো ওই ট্রাককে অর্ধেক কলা নামিয়ে পাঁচ টন মাত্র কলা নিয়েই একশ কি. মি. /ঘন্টা বেগে ছুটে আসতে হয়৷ আর কাঁচা কলার ট্রাকের দিকে সে যদি মিনিটখানেক দেখে থাকে তাহলে বেডফোর্ডের পিছনের প্রাইভেট কারটাকে মোট দুই মিনিট হর্ন দিতে দিতে ওভারটেক করার সুযোগ খুঁজতে হয়৷ কিন্তু আর দেরি না করে ওস্তাদ প্রাইভেট বলে, কেবিনের উপরে একটা চাপড় মারে সে৷ এখন যদি কেউ পাশ কাটিয়ে যাওয়া প্রাইভেট কারটিতে না বসে বিপরীত দিক থেকে আসা ড্রাইভারের সিট হতে ওস্তাদের মুখ দেখতো তবে সহজে বুঝতে পারতো তার মুখে বিরক্ত একটা ভাব ফুটে উঠেছে৷ কিন্তু সোলেমানের মুখে এই সময় একধরনের প্রশান্তি খেলা করে৷ কারণ ট্রাকে এই একটা মাত্র বিষয়ে ওস্তাদ তার কথা ফেলতে পারে না৷ বিরক্তিটা কাটানোর জন্যই সম্ভবত খাপেখাপে মিলিয়ে তিনটা ট্রাক আর একটা বাসকে ওভারটেক করিল আইজ৷ এংকা করি আগতও গেইচে মাইলকে মাইল৷ কাইল হাত ছলকি গেল কেন তামার৷ সোলেমানের চউখ তখন তিরতির করি কাঁপতেছে, বুকের মধ্যে ধড়াস-ধড়াস৷ সোলে ওস্তাদের স্টিয়ারিং-এর পাকে দেখি আছে৷ তাজ্জব কথা, ওমার হাত একনা কাঁপিল না পর্যন্ত৷ খালি একবার কইলে, মানুষটা বোঝায় মরিল রে, সোলে৷ মরবারনেয় তা বাঁচপে নাকি হে? ডাইনের চাকাটা মাথার উপর দিয়া আসিল, আর মানুষটা বাঁচি থাকপে? বুকের ধড়াস-ধড়াস কমবার পর সোলেমান সামনত দ্যাখে দশমাইল মোড়৷ একটানে কেমন করি আইল কায় জানে৷ একটা বাঁশের গাড়িকে আড়াআড়ি রাস্তা পার হতে দেখে মুখ খিস্তি করে সোলে৷ যদি কেউ সোলেমানের ভাবনার সাথে মিলেমিশে দেখতে চায় তো এই দু'তিন মিনিটে ক্ষতি কিছুই হয় না তেমন, সেটি বুঝতে পারে৷ কিন্তু এমন পরিস্থিতে খিস্তি করাই তার জন্য সংগত, নইলে কেবিন থেকে ওস্তাদের বাড়ানো গলা দেখা যাবে- 'নিন আলু নাকি সোলেমান, আরে হে সোলে৷' নির্ঘাত বলে বসবে তত্‍ক্ষণাত্‍৷ এবার খিস্তি করার পরও ওস্তাদের বাড়ান গলা দেখা যায়- 'সিংড়ার হাট আইজ; দেখি যাইস৷' যারা নাটোর রোডের নিয়মিত যাত্রী নয় একথার সহজ অর্থটি তারা বুঝবে না৷ প্রতিটি ফাঁকা ট্রাকের ড্রাইভার এখানে যেমন এপাশ ওপাশ দেখে তেমনি ধানের ব্যাপারিরাও ট্রাকের খোঁজে উঁকি-ঝুকি মারতে থাকে সিংড়ার হাটের দিন৷ এমনও হয়, কখনো সিংড়া পৌঁছানোর আগেই ব্যাপারিরা রাস্তায় বিক্রেতাকে ধরে কেনাবেচা সেরে নেয়৷ তারপর ট্রাকে চালান করে দেয় নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা কী বগুড়াতেই৷ গত সন্ধ্যায় গোডাউন থেকে বেরিয়ে আজ সূর্য আকাশের কাঁখে উঠে বসেছে, এ পর্যন্ত কোন ট্রিপ মারা হয়নি তাদের৷ সোলেমানের ওস্তাদের পকেট গুনে আরো সহজে বলে দেয়া চলে এটা৷ নান্দীগ্রাম না আসতেই ব্যাপারিদের হাত উঠতে শুরু করে ট্রাক দেখে৷ পছন্দ মতো একজনের কাছে ট্রাক থামালে বডি থেকে নেমে দরদাম করতে যায় সোলে৷ পঞ্চাশ বস্তা ধান, নাটোর পর্যন্ত নয়শ টাকা ঠিক হলে ওস্তাদও নেমে পড়ে৷ কেবিন লক করে ব্যাপারিদেরকে ধান ওঠাতে বলে সোলে৷ তারপর হাত-মুখ ধুয়ে হোটেলের দিকে যেতে থাকা ওস্তাদের পিছু নেয়৷ এখন বেলা যথেষ্ট টানটান হলেও হোটেল থেকে যে কেউ বুঝতে পারে এদেরকে পরাটার সাথে ডিমের মামলেটও দিতে হবে৷ হোটেলের বয়রা ডিম এবং প্লেটের উপর পেপার, পেপারের উপর পরাটা সাজিয়ে আনলে তাদের দু'জনের খাওয়া শুরু হয়৷ এই নাস্তাটা কিন্তু এইখানে হবার কথা নোয়ায় বাহে৷ রংপুর পযন্ত একশ বস্তা আলুর একটা টিপ আছিল বীরগঞ্জ থাকি৷ কিন্তু সন্ধ্যা উত্‍রি যায়া বীরগঞ্চতে হইল একসিডেন৷ উয়ার পর যে গু-হাগা টান দিছে ওস্তাদ- ভাইও, পাবলিক খেপলে জান বাঁচে না৷ তা না হইলে রংপুর ট্রাক স্ট্যান্ডের পানাহার হোটেল এন রেস্টুরেন্টে রাইতে দেড়প্লেট বিরানি হইতে পারতো৷ কেরু এক বোতল আর সুগন্ধায় নধর (২৬) মালের সাথে সারারাইত চোদাচুদিও হইতে পারতো৷ কলেজ ইস্টুডেন৷ হোলনাইট তিনশ টাকা মাত্র৷ দেখো কোনঠাকার নাস্তা কোনটে হইল৷ রাস্তা খেদাইতে গেল সারা রাইতটা৷ নাস্তা শেষ হলে পান মুখে দিয়ে বিড়ি ধরায় ওস্তাদ৷ আরো আয়েশ করে বেঞ্চের উপর পা তুলে বসে৷ সোলেমান বেরিয়ে ট্রাকের দিকে যায়৷ এসব ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার বিলটা ওস্তাদের পকেট থেকে যায়৷ আর সোলেমানকে যারা ঘনিষ্ঠভাবে চেনে তারা বলতে পারবে মাল ট্রিপ থেকে যে টাকা আসে সেদিকে কখনোই লোভ করে না সে৷ সিংড়ার হাটবারে নাটোর রোড পেরুনো সহজ কথা নয়৷ গরু মহিষের গাড়ি আর মানুষের ভিড়ে রাস্তা জমাট থাকে৷ খানিক ফাঁকা রাস্তা দেখে ওস্তাদ যদি একবার গিয়ার বাড়ায় তো সাতবার কমাতে হয়৷ কিন্তু না মানুষ না ট্রাক কেউ কারো প্রতি বিরক্ত নয়৷ এই হাটের জন্যই রাস্তা, রাস্তার জন্যই হাট৷ ধীরে সুস্থে হাট পেরুলেই শিশু, মেহগনি, কড়াইয়ের নিচে ছায়া ছায়া পথ৷ একটানে নাটোর পৌঁছানো যায় অনায়াসে৷ দুই চারবার হয়তো কেবিনের ওপরে চাপড় মারতে হয় নইলে সারা রাস্তায় চুল গামছা উড়িয়ে সোলেমানকে বিড়ি টানতে দেখা যায়৷ ট্রাকের বিপরীত দিকে ছুটে যাওয়া ধোঁয়া বডিতে বসা নাটোরের কুলি কামলারা স্পষ্ট দেখে৷ তাদের নেশা হলেও তারা বিড়ি খেতে পারে না৷ তারা হয়তো সোলেমানকে সমীহ করে না৷ কিন্তু ট্রাকের দুলুনির টাল সামলাতে দু'হাতই ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে তাদের বিড়ি খাওয়া হয় না৷ সেলেমান ওদের অবস্থা দেখে হাসে৷ রাস্তার পাশে পাশে শংকিত পায়ে চলা মেয়েদের দেখে হৈ দেয় মাঝে দু'একবার৷ এই ফাঁকে একটা বরুণ টিপে কী মাথা চুলকাতে চুলকাতে চোখে ধরা একটা স্কুলের মেয়েকে পিছন ফিরে অনেকদূর পর্যন্ত দেখে নেয়৷ হাত-পাও ছাড়ি দিয়া সোলেমানের মতোন খাড়া হন না কেন! ভয় নাই- এই দ্যাখো৷ ঈগলের মতন আকশত উঠি পাখা ছাড়ি দিয়া থামি থাক৷ এংকা করি একে জোকার পিরান একে রংগের ওড়না, কামিজ পিন্দা মাইয়া মানুষ, ইস্কুলের ইস্টুডেন দ্যাখেন না কেন! কারো দুধ দ্যাখো ডাব-ডাব, কেবল পাতলা একটা শাস পড়ছে কি পড়ে নাই৷ কারো ফির দ্যাখো বুক ফোটেয় নাই, বরাই বরাই৷ দ্যাখতে তো গোনা নাই! আছে নাকি? সোলেমানের ত বাড়িত পোষা বউও নাই৷ বউ যে আইজ হউক কাইল হউক হবাননেয় তাও নোয়ায়- স্টিয়ারিং হাতত আসলে তার পাছত ডাব-ডাব দুধঅলা শাবনূরের মতন একটা বউড় সোলেরও হইবে৷ নাকি পপির মতন, হে সোলেমান? ট্রাকের সামনে একটা ভ্যান লটপট করছে৷ গতি দেখলে বোঝা যায় বড় ছ্যাচড়া ড্রাইভার৷ চালাতে পারুক না পারুক সহজে সাইড দিতে চায় না৷ ওস্তাদ ডানে গেলে সেও ডানে যায়৷ বামে গেলে বামে৷ যারা ওস্তাদের সাথে লংরুটে একদিনও চলাফেরা করেনি তারা বুঝতে পারবে না ওস্তাদের রোখ চেপে গেছে৷ হর্নে হাত চেপে ধরেছে সে৷ হঠাত্‍ যখন সে লক্ষ করল সোলেমান এখনো নিরুত্তাপ তখন খেকিয়ে ওঠে; কেবিনের জানালা দিয়ে খনিক গলা বাড়িয়ে 'নিন আলু নাকি রে হারামজাদা?' বলে৷ চকিতে সচেতন হয়ে সোলেমান কেবিনে চাপড় মারতে থাকে আর ভ্যানের প্রায় গা ঘেষে ওভারটেক করে৷ না নিন আইসে নাই সোলে৷ তাইলে ভ্যান খেদাইল কেমন করি৷ নিন আইসে নাই- শাবনূরের রূপে ভুলা নাগছিল৷ সোলেমানেরও তো বউ নাগে নাকি ওস্তাদ! ডাব-ডাব৷ স্পিডোমিটার, ফুয়েলমিটার হাবিজাবি সুদ্ধায় চকচকা হওয়া নাগে৷ নাগে কি নাগে না? নাটোরে ধান আনলোড করা হলে সরাসরি ট্রাকস্ট্যান্ডের উদ্দেশে স্টিয়ারিং ঘুরে যায়৷ ড্রাইভার হেলপাররা আজ পর্যন্ত ট্রাকস্ট্যান্ডের মতো অন্য কোথাও এত নিরাপদ বোধ করেনি৷ ওস্তাদেরও রেস্ট নেবার ইচ্ছা আছে, ট্রিপে পাওয়া কাঁচা টাকা খরচের বাতিকও আছে৷ নাটোর স্ট্যান্ডে পৌনে এক ঘন্টা কেটে যাবার পর শ্রমিক সমিতির অফিসে যে লোকটি পেপার পড়ছে সে একটু চোখ তুললে ঝিম মেরে বসে থাকা ওস্তাদকে দেখতে পায়৷ আর নাক উঁচু না করেই যদি তার প্রশ্বাসকে সচেতন করে তবে বাংলামদে মেশানো স্পিরিটের গন্ধও অনায়াসে পেতে পারে৷... গলা বাড়িয়ে বেডফোর্ডের পিছনের চাকার দিকে তাকালে চাকার গায়ে হেলান দিয়ে থাকা প্রায় ঘুমন্ত সোলেমানকেও দেখবে৷ অবশ্য বাতাসের কারণে তার মুখ থেকে আসা স্পিরিটের গন্ধ পাওয়া সহজ হবে না৷ বেডফোর্ডটি তার থেকে আড়াআড়ি রয়েছে বলে পেপার পড়া লোকটি বুঝতে পারে না দৈনিক করোতোয়ায় বীরগঞ্জ সংবাদদাতা যে ট্রাকের নাম্বারটি এ পেপারে পাঠিয়েছে সেটি এদেরই৷ গতরাতে অ্যাকসিডেন্ট করার পর কেউ এমন নিশ্চিন্তে ঝিম মেরে থাকলে সন্দেহ না হওয়াই সংগত৷ কিন্তু স্ট্যান্ডে দু'জন না হোক অন্তত একজন নাম্বারটি লক্ষ করে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই তার গুতো খায় সোলেমান৷ পাবলিক গাড়ির নাম্বার সাংবাদিককে জানিয়েছে৷ সোলেমান নিরুপায়, কিছুই ভেবে পায় না৷ সে এখন করবে কী? ওস্তাদকে জানানো ছাড়া কোনো বুদ্ধি খেলে না তার মাথায়৷ 'পোড়া মবিল দিয়া নাম্বার প্লেটত একটা ঘষা দে৷' প্রায় অন্যমনস্কভাবে সব শুনতে শুনতে কথার মাঝে বলে বসে ওস্তাদ৷ ট্রাকটা হইল সোলেমানের ভাই৷ নাকি ভাইজান? তামারও তিয়াস নাগে৷ সেই জন্যেয় ওয়াটার ট্যাংকিত সকল-সন্ধ্যা দুপুর-বিকাল চপুরাইতে পানি ঢালে সোলে৷ আইজ তিয়াস বেশি নাকি হে ভাইজান? তাইলে একনা বাংলা দেই৷ বাংলার খালি বোতলটা ওয়াটার ট্যাংকের মুখে ধরে সে৷ দু'এক ফোঁটা তরল সেখানে পড়ে কি পড়ে না৷ কিন্তু বোতলটি বাষ্পে ভরে যায়৷ কেবিনের দরজা খোলার আওয়াজ হলে উপরে তাকায়৷ ওস্তাদ উঠে বসেছে৷ কভার নামিয়ে শব্দ করে সেঁটে দেয়৷ তারপর কবিরাজের হাতের সম্মোহিত পারদের মতন কেবিনে উঠে বসে৷ অভ্যাসবশত কেবিনের জানালা গলে বাম হাত বের করে ধুপ ধাপ চাপড়াতে থাকে চলন্ত ট্রাকের কেবিনে৷ পাকশি ব্রিজের নিচে ট্রাক-বাসের জ্যামে না পড়া পর্যন্ত একটানা ট্রাক ছোটায় তারা৷ মাঝে শুধু সোলেমান যখন লঞ্চের টোল দিতে নামে তখন খানিক সময় ব্রেক করেছিল ওস্তাদ৷ সোলেমান এই ফাঁকে যাত্রীবাহী বাসের হেলপারদের সাথে আড্ডা জুড়ে দেয়৷ লঞ্চের দোতলায় উঠলে হয়তো দেখা যেত পাঁচ টাকা বাজি ধরে তিন তাসের খেলায় দুইবার হেরে এক ফাঁকে লাজুক মতো একটা হাসিও হয়তো দিয়েছে সোলে৷ লঞ্চ ভেড়ামারার দিকে ভিড়বে এই সময়ের কিছু আগে একটা মহিলা আসে সোলেমানের কাছে৷ ওস্তাদ জেগে ওঠা পর্যন্ত এই মহিলাটির আবেদন নিবেদন মন দিয়ে শোনে সে৷ ওস্তাদ উঠলে তাকে দেখিয়ে দিয়ে বলে 'কি কবার ওমাক কন৷' মহিলা ওস্তাদের কাছে গিয়ে তার আবেদন নিবেদনের পুনরাবৃত্তি করলে ওস্তাদ খানিক ঠারেঠারে বলে, 'বেটিছাওয়াটার তখনে তোর যে দরদ উছলি পড়ে হে এ সোলেমান৷' মহিলা কুষ্টিয়া পর্যন্ত যাবে না৷ শহরের আগে মঙ্গলবাড়িয়া বাজারের পোয়া মাইলটাক আগে নামিয়ে দিলেই চলবে৷ বিনিময়ে সে কিছু দিতে পারবে না৷ দিতে যদি পারতোই তো ভেড়ামারা থেকে বাসে উঠত৷ তার এতো অনুনয় বিনয় এজন্যই৷ দুধঝোলা সাতভাতারি রাস্তাখাকি মাগিগুলার কথা ত সোলেমান আর ওস্তাদের থাকি কম জানে না৷ এনা ভাল করি বুকের পাকে দেখমেন কি ঘামের গন্ধতে থাকায় যায় না৷ কালা কালটি একেবারে৷ নাক-মুখ ছয় সাত দিন ধুইছে কি ধোয় নাই৷ তবু মহিলাকে কেবিনের ভেতর নেয়া হলো৷ এবার অন্তত কুষ্টিয়া পর্যন্ত সোলেমানকে চালাতে হবে৷ ওস্তাদের যে এখনো ঘুমের রেশ না কাটা ভাব৷ ওস্তাদের গা ছুঁয়ে ছালাম করে স্টিয়ারিং ধরে সোলেমান৷ পিকাপ চেপে ধরে ধীরে ধীরে গিয়ার মারে৷ একটি বাসের পিছনে পিছনে পদ্মারঘাট থেকে উঁচু বড় রাস্তায় উঠে পড়ে৷ পরপর তিনটি গিয়ার বদলে যুতমতো সামনে তাকায়৷ ওস্তাদ যদি তার দিকে সেই থেকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতো, বাইরে না তাকিয়ে, তবে বুঝতো এই ফাঁকে দু'বার তার এবং মহিলার দিকে তাকিয়েছে সে৷ মহিলা সম্ভবত সমীহবশত ওস্তাদের দিক থেকে সোলেমানের দিকে বেশি চেপেছে৷ এভাবে থাকলে সেকেন্ড গিয়ার বদলাবার ফাঁকে সে তার উরু ছুঁয়ে দিতে পারে৷ তা না করে 'একনা ওপাকে সারি যান৷' বলে সোলেমান৷ পৌনে এক ঘন্টা পরে মঙ্গলবাড়িয়া পৌঁছে বাজারের কিছু আগে ব্রেক করে৷ মহিলা নেমে গেলে কেবিন থেকে না নেমে স্টিয়ারিং-এর দিকে এগিয়ে যায় ওস্তাদ৷ কেবিন ঘুরে তার আগের জায়গায় ঘিরে আসে সোলে৷ মজমপুর বাসস্ট্যান্ড পেরিয়ে জিলা স্কুলের পশ্চিমে গাড়ি থামায় ওস্তাদ৷ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কের একপাশে ডান চাকা উঁচুতে রেখে পার্ক করে৷ তারপর শ্রমিক সমিতির অফিস৷ ওস্তাদ যদি আধ ঘন্টা আগে এভাবেই (যেন কেউ নাই রুমে, এমন ভঙ্গিতে) প্রবেশ করতো তবে সহজেই বুঝতে পারতো সামনের চেয়ারে বসা সভাপতি তার অপেক্ষাতেই আছে৷ তার ট্রাকের মালিক খবরের কাগজ পড়ে হন্যে হয়ে টেলিফোন করে বেড়াচ্ছে সবখানে৷ রংপুর নাটোর করার পর আধ ঘন্টাখানেক আগে এখানে টেলিফোন করেছে৷ কুষ্টিয়ার পুলিশ সম্ভবত এখনো জানে না৷ জানেও হয়তো-বা কারণ ট্রাফিক পোলগুলোতে এতক্ষণে খবর হয়ে যাওয়ার কথা৷ 'নাটোরিই যকুন বুঝতি পারলেন অবস্থা এরাম তা সেজাগাই মিটা আলেন না ক্যা?' সভাপতি ভত্‍র্সনা করল সোলেমানের ওস্তাদকে৷ 'বে-জাগায় পুঅিশির হাত উটলি বুজতেন৷ ওমনি, সোলেমান, যা-দেকিনি টিরাকডারে আমার গোডাউনি রাকে আয়৷' একথা শোনার পরপরই সোলেমান যদি চাবি নিয়ে না বেরুতো, তবে শুনতো তাদের জন্য বিকল্প হিসেবে খুলনা পর্যন্ত আরেকটি মালের ট্রাকের ব্যবস্থা আছে৷ মালিকের সাথে বোঝাপড়া হয়ে এ ব্যবস্থা দাঁড়িয়েছে৷ বিপদ মুক্তির জন্য ট্রাকটিকে গোডাউনের ঘেরা চত্বরে রেখে এসে সোলেমান দেখে ওস্তাদের গোসল হয়ে গেছে৷ চুল ভেজা ভেজা৷ এখন শুধু তার গোসলটা হলে একত্রে মজমপুর হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্টে যেতে পারে তারা৷ খাওয়ার জন্য৷ খাবার সময় ওস্তাদের দিকে একবার তাকালে সহজে বোঝা যায় তার মন খচখচ করছে এখন৷ 'বীরগঞ্জের বিপদ যে কুষ্টিয়াতে আসি পিটটিবার ধরিল রে সোলে৷' সোলেমান সম্মতি সূচক 'হ' বলে আবার খাবারের দিকে বেশি বেশি নজর দিতে থাকে৷ যথাসময়ে কে একজন পিলার ভরা সাতটনী একটা টাটা এনে সমিতির অফিসের কাছে রেখে গেছে৷ এটাই এখন তাদের নতুন গাড়ি৷ সোলেমান ওস্তাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ওস্তাদ কিছুতে সহজ হতে পারছে না এখন পর্যন্ত৷ তাকে উত্‍সাহ দিতে আগ বাড়িয়ে তেল, মবিল, পানি দেখে সোলেমান৷ তার মনে হয়- এটা তার সত্‍ভাই৷ বেডফোর্ডের সাথে এর তুলনা চলে না৷ কোথায় ঘরের বউ আর কোথায় পরের ছউ৷ সোলেমান ও তার ওস্তাদ যখন টাটার কেবিনে উঠে বসেছে এবং ক্রমাগত ট্রাকটি বড় রাস্তার উপরে উঠে আসছে তখন কেউ যদি পশ্চিমাকাশে মাগরিবের ওয়াক্ত খুঁজত, তবে বুঝতো, প্রায় বিশ মিনিট আগে অন্ধকার গাঢ় হতে শুরু করেছে৷ শহরের আলোর আড়ালে আড়ালে নিজেদের জায়গা খুঁজতে শুরু করেছে অন্ধকার৷ এক মিনিট আগে টাটার সামনে দু'টি, কেবিনের উপরে পাঁচটি, পিছনে দু'টি লাইট জ্বলে উঠেছে৷ কুষ্টিয়া থেকে চার মিনিট পর যদি কেউ হিসাব করতে বসে ত অনায়াসে বুঝতে পারবে টাটাটি ততোক্ষণে ঝিনাইদহ সড়ক ধরে চৌড়হাস পেরিয়ে গেছে৷