Wednesday, June 06, 2007

জিসম # মাহবুব মোর্শেদ

শরীর বিষয়টি শুরু থেকে আমার জীবনে ভীষণ আলোচ্য একটি প্রসঙ্গ হয়ে থাকলো। এ বিষয়ে অবশ্য আমার গুরু সৈয়দ আমাকে মাঝে মধ্যে বকাবাদ্য করেন। তিনি তরুণদের বিশাল অংশের মেয়েদের উরুতে হাত রেখে জীবন অতিবাহনের বেদনায় ব্যথিত। এদের যে সমাজ-সভ্যতায় কোনো অবদানই রইলো না এ নিয়ে তার আফসোসের কমতি নাই। আমি তর্কের খাতিরে গুরুর সাথে তর্ক করি। নইলে গুরু-শিষ্যের সম্পর্কটা অধীনতামূলক মিত্রতা হয়ে পড়ে। সম্পর্কের ডায়ালেকটিকসটা ফোটে না। বলি, কী কও গুরু, আমি তো দেখি শরীরেই আরাম। সব শাস্ত্র ঘেঁটে এসে হে পণ্ডিত, নারীতে আরাম। গুরু কয়, এইটা কী কইলি? জীবনের অভিজ্ঞতার কথা যদি ধরিস, তবে বলি, তোদের বয়সে নারীর শরীরকে মনে হইতো শরাবান তহুরা, বেহেশতের শরাবের নদী; সে শরাব আমি গেলাসে গেলাসে পান করেছি। এখন কী মনে হয় জানিস? স্রেফ একটা চকলেট-লজেন্সও যদি মনে হইতো, তাহলেও হইতো। আমি বলি, তবে তো সেই একই ঘটনা ঘটলো গুরু। যুগে যুগে গুরুরা শিষ্যকে একই কথা বইলা আসলো আর শিষ্যরাও থোড় বড়ি খাড়া... গুরুর যৌবনকালের দিকে ধাবিত হইলো। আমি একটা কথা কই গুরু, যদি কিছু মনে না নেও তবে সত্য হইলো ওইটা তোমার প্রৌঢ়ত্বের সত্য আর এইটা আমার যৌবনের সত্য। যুগে যুগে গুরুরা ওই এক কথা কইয়া গেল। আর শিষ্যরাও উল্টাপথে মদন রসে মন মজালো। গুরু বুঝে, আমি যা বলি তাই করি। তাই তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কন এই কারণেই পৃথিবীটা এইখানে আইসা পৌঁছাইলো। আমি দেখলাম গুরু হতাশ। এটা সহ্য হওয়ার নয়। তাই এইবার গুরু-শিষ্য মিলে পৃথিবীর বর্তমান ভোগবাদীতাকে গালাগাল করতে থাকি। এই ফাঁকে পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি আমার নাম রাকেশ, গুরু বলেন রাস। আর গুরুর নাম সৈয়দ, আমি কিছু বলি না। গুরু গৌরবর্ণ, চক্ষু বড় গোলগোল চকচকে, হাইট ভালো, আমি আর গুরু যখন রাস্তায় হাঁটি তখন মনে হয় গুরু দোতলা বাসের ছাদ থেকে কথা বলছে। এই নিয়ে লোকে রঙ্গ-তামাশা করে। তা করুক, তথাপি গুরুর একটা জিনিস কিন্তু লোকে তেমন একটা জানে না। সবাই ভাবে তিনি আমার অ্যাবনরমাল ফ্রেন্ড, উনি বিদ্বান ব্যক্তি, অমায়িক, মিশুক। আর পারতপে যৌন বিষয়ে হয়তো একটা কথাই তাদের মনে হয় যে, আমার গুরুর ধোন নাই। বন্ধু-বান্ধব জিজ্ঞেস করে তোর সৈয়দের বয়স কত? সঠিক বয়স বলতে গুরুর নিষেধ। এমন কি সাল-বিহীন জন্ম-তারিখও বলা চলে না, তাই বলি এ্যারাউন্ড ফিফটি। তবে তো ওনার খাড়ায় না, কি বলিস? এই কথার সদুত্তর হয় না। কিন্তু মোম একটা উত্তর দিতে হয়, তাই বলি ‘যাইও’। গুরুর যেসব বিষয় লোকে জানে না সেগুলো একে একে বলি।
তারও আগে বলা দরকার এই গল্পের ভূমিকাটা কী। অর্থাৎ কী বিষয় নিয়ে এই গল্প তৈরি। সে ২০০৩ সালের জুন মাসের কথা। আমার জীবনে একটা ভয়ানক প্রলয় উপস্থিত হলো। সামান্য একটা ভুলের জন্য সমস্ত বন্ধু আমাকে ছেড়ে দিলো। ঘটনা কিছুই না, এক পার্টি-ফার্টি কিছু হবে। জেলা শহরেও আজকাল এগুলো হয়। ড্রিঙ্কস কিছু ছিল। ড্রিঙ্কস করলে আমি একটু জ্ঞানী-জ্ঞানী কথা বলি, তাই বন্ধুরা আমাকে ওভারডোজ করে দিলো। আমার তখন হঠাৎ একটা হিন্দি গান মনে পড়ে। সবলোগ পিতে হ্যায় শরাব পানি মিলাকে, ম্যায় তো পিতে হুঁ শরাব জওয়ানি মিলাকে। বন্ধুরা ওয়াহ ওয়াহ করে উঠলে আমার উৎসাহ বেড়ে যায়। প্রাসঙ্গিকভাবে বলে রাখি, পার্টিতে বন্ধু-স্ত্রীরাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উপস্থিত ছিল। মফস্বলের মেয়েরা এইসব ব্যাপারে একটু বেশি ফাস্ট। ওই হিহি হো হো আর খোলামেলা পোশাক-আশাকে। আসরটাকে আমি হিন্দি সিনেমা নাকি হলিউডি সিনেমাই ভাবলাম জানি না। একে তো মদের ঘোর অন্যদিকে মহিলাদের সেক্সি আউটলুক। মরার ওপর খাড়ার ঘা। হাতের কাছে এক বন্ধু পতœীকে পেয়ে কিস বসিয়ে দিলাম। আর যাবে কোথায়? ওই ঝাকানাকা ফাস্ট মেয়েও ফোঁস করে কেঁদে দিলো, তার স্বামী মদের বোতল বাগিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসলো। পার্টি ফার্টি লাটে উঠে বিচার সভা বসলো। আমার গরম মাথা হিম হয়ে আসলো। এই মুহূর্তে সেটা অসঙ্গত বিধায় আমি যারপর নাই মাতলামি করতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত আমাকে মাতাল অবস্থায় মাফ চাইতে হলো, আর আমি যেহেতু অবিবাহিত, তাই এইসব আসরে আমাকে নিষিদ্ধ করা হলো। সেই থেকে আমি বন্ধুবিহীন। এবং সবার অলে গা ঢাকা দিয়ে শহরে থাকি। বেনাপোল থেকে একটা ইন্ডিয়ান ভিসিডি প্লেয়ার আনিয়ে সারাদিন হিন্দি-বাংলা-ইংরেজি ছবি দেখি, গান শুনি। টিভিতে ডিশের লাইন আছে। সারাদিন চ্যানেল ঘুরাই আর বিড়ি-সিগারেট ফুঁকি। সেক্সের ধান্দা বাদ, তলে তলে বয়স তো আর কম হলো না। এই বয়সে এত ঝক্কি আর সইতে পারি না। তাই হাত মেরে যা হয় তাতেই সই। এইভাবে জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর গেল।
আমি জ্ঞান পিপাসু। যা হওয়ার তাই হলো বর্তমান সিনেমা-বাজার নিয়া আমার বিস্তর জ্ঞান জমলো। জ্ঞানের একটা নিজস্ব ধর্ম আছে একটুখানি জমলেই তা পেটের বাহির হওয়ার জন্য আকুপাকু করে। কী করি কী করি। কেউ আমার দিকে ফিরে তাকায় না। হয়তো ভাবে, লোকসমে যদি তুমি চুমু খাইতে পারো তোমার কাছে আড়ালে ভদ্রলোকের বউ ছেড়ে দিলে কী হবে? আমি এইটুকু বলার অবকাশ পাই না যে ভাই আমি অতো খারাপ লোক না।
এই খারাপ সময়ে আমার জীবনে সৈয়দের আবির্ভাব। কোন বংশের সৈয়দ কে জানে। সন্ধ্যাবেলা মনটা এমনিই একটু আকুপাকু করে তাই মাঠের মধ্যে বসে ছিলাম। চারদিকে হালকা অন্ধকার। গোধূলির আলো মিলিয়ে যাবে যাবে। এমন সময় ফাঁকা মাঠে আমার সামনে অপরিচিতি এক ব্যক্তির আবির্ভাব। বলে, আপনার মধ্যে তীব্র যৌন আতৃপ্তিবোধ আছে। আমি ভাবলাম, কে এই ব্যক্তি যে একেবারে চিন্তার গভীরে সেঁধিয়ে যায়? হতচকিত হয়ে তার দিকে তাকাতে চাইলাম কিন্তু অন্ধকারে মুখ দেখা গেল না। রবীন্দ্রনাথের মণিহারা গল্পটির কথা মনে পড়ে গেল। আমিও তাকে পরখ করে নিতে চাইলাম। কোনো কথা বলে চুপচাপ তার দিকে তাকালাম, তারপর আবার আগের মতো উদাস বসে থাকলাম। জীবনে এত ঘাট মাড়িয়েও এত বন্ধু এত প্রেম তবু তৃপ্তি এলো না তো? ভেবেছিলেন আপনার মতোই আশপাশের দুনিয়া দেখলেন তা নয় এখন একা এই মাঠে বসে ভাবছেন জীবনের তবে কী মানে আছে? গা ঝাড়া দিয়ে উঠুন। শিড়দাঁড়া টানটান করে দাঁড়িয়ে পড়–ন। সত্যি বলতে কী, একটা বল পেলাম যেন তার কথায়। বললাম, আপনি কে? কী আপনার পরিচয়? উনি বললেন, আগে আলোয় চলুন। সেই পরিচয় সৈয়দের সাথে।
প্রথম দিনেই গুরু মানলাম। সম্বোধনে সে দুই ধাপ আমি একধাপ নিচে নামলাম। তুই-তুমি। মাঝে-মধ্যে অবশ্য ফাকচুয়েট করে। তুই-তুমি। তুমি তুই। হাজার হলেও গুরু বলে কথা। সৈয়দের মানসকাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সে ২৫% আইডিয়ালিস্ট + ১৫% লিবারেল ডেমোক্রেট + ১০% উপযোগবাদী + ৩০% বন্ধু অন্তপ্রাণ + ১০% অলস + ৫% শরীরী + ৫% স্বার্থপর। পড়াশুনায় ভয়াবহ সামন্ততান্ত্রিক। আমার ব্যাপারে সৈয়দের মূল্যায়ন হলো আমি ৫০% শরীরী + ২৫% অশরীরী + ২৫% মার্কসবাদী।
মার্কসবাদ কী জিনিস আমি জানতাম না। সৈয়দই প্রথম আমাকে মার্কসবাদ বিষয়ে জানালো। এরকম একজন আধা-বুর্জোয়া আধা-সামন্তবাদী কিভাবে আমাকে মার্কসবাদের মতো বিধ্বংসী দর্শনের খোঁজ দিতে পারলো এখন আমি ভেবে অবাক হই। পরিচয়ের সপ্তাহ কি পকাল পরে একদিন গুরুর বাড়িতে গেলাম। বাড়ি দেখে তো আমার চু চড়কগাছ। গ্রন্থময় এক বাড়ি। দান্তে, তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, গ্যাটে, শেক্সপীয়র, রবীন্দ্রনাথ এইসব লেখকের খণ্ড খণ্ড ভরা। টীকাভাষ্য, উপনিষদ, বাইবেল এগুলাও আছে। এক কথায় বলা যায় সমাজের আধুনিক যুগে প্রবেশের পরের আর কোনো বই তার বাড়িতে ঢোকেনি। যাই হোক, আমি বিস্মিত এবং খানিকটা হতোদ্যম হয়ে পড়লাম। লাঞ্চের পর তাকে ধরলাম, গুরু কাসিক পড়ো ভালো কথা, কিন্তু এত হাজার হাজার বইয়ের মধ্যে আধুনিক যুগের সাহিত্যের ছিটেফোঁটাও নাই এইটা কেমনে হয়? গুরু বলে, সবটা এতেই আছে। অর্থাৎ কিনা আধুনিক সাহিত্যে যা আছে, এগুলোর মধ্যেও তাই আছে। সত্যি কথা বলতে কি, শিল্প বিপ্লবের পর পৃথিবীতে ক্রিয়েশন বলতে কিছু হয়নি। সবই এন্টারপ্রেটেশন। আমি খোঁচানোর জন্য বললাম তুমি ভীষণ সামন্তীয়। এইটুকু বলে আমি থামলাম কেননা এইতো তার সাথে শেষ কথা নয়। আর একটা কথা। একটু পড়াশোনা না থাকলে আলাপ ঘন হয় না।
যাই হোক, সৈয়দের মাধ্যমে আমার সিনেমা-জগতে দাসযুগ আর সামন্তযুগের কিছু বইয়ের অনুপ্রবেশ ঘটলো। রীতি অনুযায়ী আমার বাড়িতেও সে এক দুপুরে লাঞ্চে আসলো। আমার সংগ্রহে অসংখ্য সিডি দেখে তারও চু চড়কগাছ। বয়স হয়েছে। তবু যৌবন, যৌনতা ও ফ্যান্টাসির এই অসামান্য উৎসার কার না ভালো লাগে। তাকে আমি জিসম ছবির কথা বলি। বলি যে, জিসম মানে হলো শরীর। এ ছবিটা সামনে মুক্তি পাবে। এতে অভিনয় করবেন বোম্বের টপ মডেল বিপাশা বসু। ধারণা করা হয় শি ইজ ওয়ান অফ দ্য সেক্সিয়েস্ট এ্যান্ড মোস্ট সেনসুয়াস গার্ল ইন দ্য অরিয়েন্ট। উই আর ওয়েটিং ফর হার লেটেস্ট আউট-বার্স্ট। সৈয়দ বলে তুমি আছ পুঁজিবাদের প্রোডাক্টের রিয়েলিটির জগতে। ইট ইজ সাম শর্ট অফ হাইপার-রিয়েলিটি। এখন তোমার আর আমার বন্ধুত্ব হইতে হইলে দরকার মার্কস আর এ্যাঙ্গেলস। প্রোডাকশন রিলেশন বুঝতে সেই থেকে আমার প্রগতি প্রকাশনীর বই পড়া শুরু। আমি বই আনি, গুরু সিডি নিয়ে যায়। এইভাবে আমাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে ওঠে। একদিন আমি ভাবি এই যে অসম বন্ধুত্ব, এইটা কেন? সৈয়দকে একটা পরীা করা যাক তো। তো, একদিন আমি রাত্রে তার বাসায় থাকি। পরীা করি ছেলে ছোকরার পাছা মারার তাল আছে কিনা। এই বয়সে এমন ভীমরতি দেখা দিতেই পারে। বলাবাহুল্য সৈয়দ পরীায় উত্তীর্ণ হলো। এখানেও সে আইডিয়ালিস্ট। মেয়ে ছাড়া লাগায় না। এরপর তার সাথে আমার যৌন বিষয়ে খোলামেলা কথাবার্তা হতে শুরু করলো। আমি আমার হিস্ট্রি বললাম। সে বললো, আমি তোমারে আর হিস্ট্রি আর বলি না। বরং আসো আমরা একটা সাইকোলজিক্যাল গেম খেলি। তোমারে আমি আমার এক পুরানা বন্ধুর কাছে নিয়া যাই। তুমি ওর কাছ থেকে আমার হিস্ট্রির একটা অংশ জাইনা নাও। তবে শর্ত থাকে, তুমি জেলাস হইতে পারবা না। এই কথা হয়ে থাকলো। তথাপি আজ যাই কাল যাই করে করে তার বন্ধুর বাড়ি আর যাওয়া হয় না। আমিও সৈয়দকে ভরসা রেখে এদিক সেদিক একটু ভাগ্য টেস্ট করতে থাকি। গুরু মধ্যযুগ থেকে এক নায়ককে ধরে এনে আমার সাথে তুলনা দেয়। বলে, এই খাই-খাইপনার নাম হলো ডন জুয়ানপনা। গুরুর ভর্ৎসনায় আমার মন কঠিন হয় না। মেয়ে দেখলে মাল মাথায় ওঠে। ভদ্রলোকের স্ত্রী-কন্যা কেউই বাদ যায় না। এই দেখে ভদ্রলোকেরা আমার কাছ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকে। পারতপে আমার সাথে তাদের স্ত্রী-কন্যার পরিচয় করায় না। আমার এই গতিক দেখে গুরু ব্যথা পায়। বলে, রোসো। এইভাবে ক্রিয়েটিভিটির বারোটা বাজানোর অধিকার তোমার নাই। একটা উদ্বেগবিহীন সেক্সুয়াল লাইফ দরকার তোমার। চলো, কালকেই তোমারে আমার বন্ধুর বাড়ি নিয়া যাই। উদ্বেগবিহীন যৌনজীবনের সাথে বন্ধুর বাড়ির সম্পর্ক কী। গুরু বলে, রোসো।
গুরুর পীড়াপীড়িতে একদিন তার সঙ্গে শহরের দণি দিকে রওনা হলাম। ধরা যাক, তার বন্ধুর নাম রেবেকা বা লতা। আসল নাম এখানে উহ্য থাক। অবশ্য তাতেও কিছু আসে যায় না। পাঠিকারা অবগত যে গল্প গল্পই। যথারীতি পুরানা ধাঁচের বাড়িটিতে আমরা ঢুকে পড়লাম, বসবার ঘরে বসেও পড়লাম। ততোদিনে জিসম ছবিটি আমার দেখা হয়ে গেছে। দেখলাম সাাৎ বিপাশা বসু হেঁটে আসছেন।
আমার নাম লতা।
সৈয়দ বলল, ও বন্ধু; আমি বললাম, রাকেশ।
সৈয়দ প্রথমেই একটা গভীর পাঁচ মিনিটের চুমু এবং আমার সামনেই লতার দুধ থেকে নিয়ে পাছা পর্যন্ত হাতিয়ে ফেললো।
এরাউন্ড ফোর্টি। বোঝার উপায় নাই। ঈষৎ কৃষ্ণবর্ণ। আমার অবস্থা বলার মতো নয়। লতা না রেবেকা না বিপাশা আমাকে ইঙ্গিতে বসতে বললেন এবং সৈয়দের গাল কামড়ে একেবারে লাল করে ফেললেন। হঠাৎ তাকে ছেড়ে আমার দিকে নজর দিলেন। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন। কোথায় থাকি কী করি ইত্যাদি। সৈয়দ ততোণে দাঁড়ানো থেকে সোফায় বসে পড়েছে, লতা না বিপাশা না রেবেকা দাঁড়িয়েই ছিলেন আলুথালু বস্ত্রে। গুরু তাকে হোতকা টান মেরে কোলে বসালেন। একটানে ব্লাউজ খুলে নিপল চুষতে আরম্ভ করলেন। উনিও খুব সিরিয়াসলি আমার সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। আমার তখন মৃত্যুময় অবস্থা। এর চেয়ে আমাকে উলঙ্গ করে রডের বাড়ি দিলেও হতো। আমি জানুয়ারি কি ফেব্র“য়ারির শীতে ঘামছিলাম আর কাঁপছিলাম। ভেতরে শ্বাসকষ্ট টের পাচ্ছিলাম এবং মনে হচ্ছিল আমি তুনি মারা যাব। তারা যখন আরও ব্যস্ত হয়ে পড়লো তখন আমি ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। বিশাল ফাঁকা বাড়িটিকে আমার একটা ডাইনির বাড়ি বলে মনে হলো। যে ডাইনি শুধু পুরুষের রক্তই পান করে চলে ক্রমাগত। আমি স্তম্ভিত, নির্বাক ও স্মৃতিশক্তি বিলুপ্ত হয়ে কতণ দাঁড়িয়েছিলাম জানি না। সৈয়দ আমার ঘাড়ে হাত রাখলে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। তার দিকে তাকাতে পারলাম না। ফিরতে ফিরতে বলেছিল, এতো আধুনিক ছেলে তুমি। সিনেমা দেখ, এক্স-ফেক্স কিছু বাদ দেও না। দেখলা তো সইতে পারলা না। জেলাস হইলা। শোনো, তোমারে তিনটা কথা বলি
ক. শরীরের বাস্তব ও অধিবাস্তব এক ব্যাপার নয়। তোমার শত-সহস্র হাইপার-রিয়েল চর্চা তোমাকে শরীরী মূল্যবোধের বাইরে টেনে আনতে পারে না।
খ. শরীর এমন এক দুর্গ যা সব সময় মরচে পড়া তালা দিয়ে বদ্ধ থাকে। যার চাবি কখনোই তুমি খুঁজে পাও না। দুর্গে ঢুকতে হলে তালা ভাঙতেই হয়। এ এমন এক দুর্গ কেউ নিয়মিত যাতায়াত করলেও তা তালাবদ্ধই থাকে অন্য সবার কাছে। অন্য কেউ পুনরায় তালা ভেঙে ঢুকে পড়লে দুর্গ কিছুতেই আর তোমার থাকে না।
গ. শরীর সব সময়ই ঈর্ষা, ক্রোধ, হিংসা, জিঘাংসা আর জুগুপ্সার বসতি।
আমি তর্ক করার মতো অবস্থায় ছিলাম না। সত্যি কথা বলতে কি তার কথার প্রতিবাদে আমি কেঁদে ফেললাম।
সৈয়দ বলল, আমার সাথে চল। তোকে আজ এক অদ্ভূত জিনিস পড়তে দেব। ভেবেছিলাম সে আমাকে মার্ক্যুইস দ্য সাদ পড়তে দেবে। কিন্তু খাওয়ার পর রাত্তিরে তার রিডিংরুমে সে যে গল্পটা আমাকে পড়তে দিলো তা হলো ক্রোয়েটজার সোনাটা। গুরু ওষুধ জানে। আমার মাথা এক্কেবারে ঠাণ্ডা হয়ে এলো।
পরদিন ভোরবেলা সৈয়দ আমাকে জাগিয়ে তুললো। অত্যধিক শীতের সকাল ছিল সেটা। সৈয়দ পথ্যও জানে ভালো। গরম কফিতে একটু ব্রান্ডি মিশিয়ে খেতে দিল। তাতে আমার চেতনা ভেতর থেকে সাড়া দিলো। আমি গুরুর দিকে তাকালাম। সে ইতিমধ্যে স্নান সেরে নিয়েছে। বললো, রাকেশ আসো আমরা একটা গেম তৈরি করি। খেলাটা এই যে তুমি জীবনের যে জায়গায় আছে সেখানে আমি পৌঁছাবো আর আমি যেখানে আছি সেখানে তুমি আসবা। ধরা যাক, মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এইটা রেবেকার শরীর। আমি সেখানে পৌঁছে গেছি। তুমিও পৌঁছাও। আসো আমরা পরস্পরকে ক্রস করে স্থান বদল করি।
আমি বুঝি গুরু কী বলতে চায়। আমার সেক্সুয়াল লাইফে এটা নতুন ঘটনা। গুরু কি দেবতা নাকি? একবার পজিটিভলি ভাবি আবার পিছিয়ে আসি। নৈতিকতায় আঘাত লাগে। শেষমেষ বলি, এইটা কী কইলা গুরু। উনি তোমার বন্ধু। আমার শ্রদ্ধার পাত্র, তুমি পাগল হইয়া গেছ। আমার সামনে আর এই ধরনের কথা বলবা না। তুমি বরং এক কাজ করো, আমারে কিছুদিন মার্কসবাদ শেখাও। কম্যুনিজমে দীা দেও।
দেখলাম গুরু রাজি। তাই পরবর্তী তিনমাস আমরা কম্যুনিজম চর্চায় ব্যস্ত থাকলাম। গুরু মার্কস-এঙ্গেলসের নির্বাচিত কিছু বই আমাকে পড়তে দিলো আর সপ্তাহে সপ্তাহে পাঠচক্র শুরু হলো দু’জনের। আমরা যথাক্রমে পুঁজির বিকাশ, প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা, উদ্বৃত্ত-মূল্য, সর্বহারারা একনায়কত্ব, জগৎ পরিবর্তনের উপায়, তত্ত্ব ও চর্চা, পার্টি ও ব্যক্তি, বিপ্লবী লড়াইয়ের আবশ্যিক শর্ত ইত্যকার বিষয়ে আলোচনা করলাম। সৈয়দকে দেখলাম এই আলোচনার ফাঁকে তরুণ সমাজের উপর মহাবিরক্ত। এরা দুনিয়াটাকে চেঞ্জ করতে চায় না বুঝলা? এরা চায় শরীর। মেয়ে মানুষের উরুতে হাত রাইখা তিন তিনটা জেনারেশন চইলা গেল। কিছুই হইলো না। সব আফিমে ডুইবা রইলো। শরীরের বাইরে এরা দুনিয়াটাকে দেখলো না। তুইও তাই। বলি, সময় থাকতে শরীরটাকে ছাপায়ে ওঠ। আমি বুঝি, গুরু আমাকে আড়ালে আবডালে নেগেশান অব নেগেশান দিয়া রেবেকার শরীরের দিকেই টানে। কিন্তু আমার নৈতিকতা সায় দেয় না।
একদিন আমি সৈয়দকে বলি অনেক তত্ত্ব তো বুঝলাম। আসো এবার প্রাকটিস শুরু করি। পার্টি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করি।
ভালো কথা। পার্টি কী?
বিপ্লবের অগ্রগামী অংশ। শ্রমিক শ্রেণীর সহযোগী একটি পাতিবুর্জোয়া দল। শ্রেণীগতভাবে যারা নিজ শ্রেণীকে খারিজ কইরা আসে।
হইলো না। পার্টি হইলো একটা সম্পর্ক। অসংখ্য মানুষের সম্পর্কের সূত্র হইলো পার্টি। দুইজনে পার্টি হয় না। গঠন করলেই পার্টি হয় না। দুই থেকে তিন তিন থেকে বহুতে যাইতে হয়। এখন কথা হইলো তুই দুই থেকে তিনে যাইতে রাজি কিনা।
হ রাজি।
তাইলে রেবেকারে রিক্রুট কর। দেখা যাক, আমাদের তিনজনের পার্টি কেমন জমে?
এ কথায় আমার হাড়গোড়সহ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায়। আমি ভেবেছিলাম আমার প্রসঙ্গে গুরু রেবেকার কথা ভুলে গেছে। কিন্তু এই কথায় আমি নতুন করে অস্বস্তিতে পড়ে যাই। সে বলে
তুই আছস কনসেপচ্যুয়ালি পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পণ্যতাড়িত অবস্থায়। আমি আছি আধাসামন্তীয় আধাপুঁজিবাদি অবস্থায়। রেবেকা নারী। অবশ্যই নিপীড়িত গোষ্ঠীর সদস্য। তাকে আমাদের সঙ্গে আনতে হবে। আমাদের তিনজনের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
আমি কেমনে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাই? মনু বলেছেন, কুত্রাপি গুরুপতœীর সাথে প্রেম করবা না। এ অবস্থা হলে তো সৈয়দ আমার গুরু থাকে না। সে আমার মার্কসবাদের গুরু।
পরের এক সপ্তাহ আমি গুরুর সাথে দেখা করিনি। আমার ব্যক্তিগত গুহার মধ্যে আত্মরতিতে মগ্ন হয়েছিলাম। সারা দিন টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে এক সপ্তাহ পার করে দিলাম। হঠাৎ এক সকালে সৈয়দের বাড়ির সামনের চায়ের দোকানদার আমার বাড়িতে এসে হাজির। কী ঘটনা? সৈয়দ সাহেব ভীষণ অসুস্থ, আপনাকে যেতে বলেছে। সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম। দেখলাম সে সত্যি অসুস্থ এবং মৃত্যুশয্যায় শায়িত। মুখ তার রক্তশূন্য, চোখগুলো কোটরে পৌঁছে গেছে। তার শীর্ণ একটা হাত হাতে নিয়ে মুঠোর মধ্যে ভরে ফেললাম। এতো তাজা লোকটার এই হাল? তবে কি ভিতরে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ভয়াবহ অসুখ ছিল?
গুরু ইশারায় আমাকে তার আরো কাছে সরে যেতে বললো। ফিসফিস করে বললো যা রেবেকাকে নিয়ে আয়। ওর বাড়িটা চিনতে পারবি? আমি তার কথায় সায় দিয়ে উঠলাম। এতটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম যে ওখান থেকে যে কোনো মূল্যে উঠতেই চাচ্ছিলাম। পথ চিনে চিনে রেবেকার বাড়ি পৌঁছালাম দুপুরে। তিনি বাড়িতেই ছিলেন। আমাকে দেখে হাসলেন এবং চিনতে পারলেন। তার মধ্যে অসাধারণ সৌন্দর্যের পাশাপাশি একটা পবিত্রভাব দেখতে পেলাম। সংবাদ শুনে তাড়াতাড়ি নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বের হলেন।
রিকশায় ওঠার পর তিনি কথা শুরু করলেন।
দুঃখিত, সেদিন আপনার প্রতি সুবিচার করা হয়নি।
আমার একটা প্রশ্ন আছে।
বলুন। এই বলুন উচ্চারণেই তীব্র একটা ব্যক্তিত্বের ছটা টের পেলাম।
নারী হিসেবে এটা কী আপনার জন্য অবমাননাকর নয়?
কোনটা অবৈধ যৌন সম্পর্ক, সৈয়দের সাথে সম্পর্ক নাকি তোমার সামনে যৌনতা?
আমি চুপ থাকলাম।
জেনে রেখ। এটা যৌনতা নয় এটা একটা যুদ্ধ।
কেমন?
সৈয়দ কি তোমাকে কিছুই বলেনি?
না। আপনার কাছে শুনতে বলেছিল।
শোনোনি কেন এতদিন?
ভয় ছিল।
পাছে জড়িয়ে যাও। সৈয়দ জড়াতে বলেছে, তাই না?
রেবেকো না লতা না বিপাশা তারপর আমাকে সৈয়দের জীবনের গল্পের একটি অংশ বলেছিলেন। তখন রেবেকার সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল একটা ইউজি পার্টি করার দৌলতে। সেভেনটিজের এক বিুব্ধ সময় ছিল সেটা। হত্যা, বদলা হত্যা, গুমখুন, জেল-জরিমানা। সৈয়দ ছিলেন পার্টির নিচের সারির সদস্য। এদের মৃত্যুর খবরই বা কে রাখে আর জেলেই বা কার কী আসে যায়? আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা অবস্থায় তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং পাক্কা দশবছর পর জেলে থেকে বের হন। আগেই বলেছি, সৈয়দ ছিলেন নিচের সারির অনুল্লেখযোগ্য একজন নেতা। ফলে তার এই জেলজীবন কারো নজরে পড়েনি। যেমন এমন আরও অনেক মৃত্যুর কথা কেউ কোনোদিন জানতে পারবে না। তেমনিই ছিল তার গোপন জেলজীবন। তার উপর অবর্ণনীয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ফলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। অধিকাংশ সময় নির্যাতন-ভীতিতে থাকতেন। তিনি যখন জেল থেকে বেরোন তখন আণ্ডারগ্রাউন্ড ওভারগ্রাউন্ড কিছুই খুঁজে পাননি। নিজের শহরে ফিরে দেখেছিলেন, তার জন্যে পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে তার বাবা মরে গেছেন। এরপর রেবেকাকে খুঁজতে থাকেন। রেবেকাকে খুঁজে পান তার শ্বশুর বাড়িতে তার স্বামীকেও চিনতে পারেন। বলাবাহুল্য সব গল্পের মতোই তার স্বামীটিও ছিল সৈয়দের শত্র“পরে লোক। রেবেকার স্বামীর শহর থেকে রেবেকাকে তিনি নিজ শহরে নিয়ে আসেন তার আরও পাঁচ বছর পর, যখন তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তাকে এনে রাখেন নিজের পুরানা পৈত্রিক বাড়িতে।
শোনো ও যখন যৌন সম্পর্ক করে তখন নিজের জীবনের ব্যর্থতা, আমার মৃত স্বামীর প্রতি ােভ, এই ব্যবস্থা সকল কিছুর বিরুদ্ধে তার শারীরিক প্রতিবাদ জানায়। আই এনজয় ইট।
এতকিছু জানার পর আর সৈয়দের সামনে যাওয়া যায় না। শ্রদ্ধা, অবসাদ ও বেদনায় আমি নুয়ে পড়ি। তার এই সংগ্রামমুখরতার সামনে নিজেকে অনেক ুদ্র মনে হয়। রেবেকাকে পৌঁছে দিয়ে আমি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ওষুধ কিনতে বাজারে যাই। রেবেকা তার দায়িত্ব নিলে কিছুটা ভারহীন বোধ করি। ডাক্তার এসে দেখে যায়। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ফুঁকতে থাকি। মানুষের জীবন, জীবন-অভিজ্ঞতা, উত্থান, পতন, গোপন বেদনা আমাকে জীবন সম্পর্কে এমন একটি আবিষ্কারের মুখোমুখি দাঁড় করায় যাকে স্বচে দেখতে গেলেও আমি ভয় পেতে থাকি। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে থাকে। দুই কি একদিন এভাবেই গেল। তৃতীয় দিনে একটু স্বাভাবিক হয়ে এলাম। সৈয়দের বাড়িতে চলাফেরায় স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠলাম আবার। এমনকি তার সামনে যেতেও। দেখলাম মৃত্যু তার দিকে ঘনিয়ে আসছে। গালের দু’পাশ বেয়ে সাদা কষ পড়ছে। পুরাতন নির্যাতনের বেদনা ফিরে আসছে তার শরীরে। তাকে আরও গরম কাপড়ে ঢেকে দেয়া হলো। আমি আর রেবেকা সারারাত শিয়রে বসে থাকলাম। তার কপালের রেখাগুলো দপদপ করছিল আর চোখ থেকে পানি ঝরে বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। বিকেলের দিকে শ্বাসকষ্ট আর কাশির গমক উঠতে শুরু করলো। ওই সন্ধ্যায় বিপাশা আমাকে সৈয়দের অদ্ভূত অনুজ্ঞার কথা শোনালেন রিডিংরুমে ডেকে নিয়ে। বললেন, সে চায় তুমি আমাকে তার সামনে চুমু খাও। হি লস্ট এভরিথিং বাট মি। সে দেখে যেতে চায় তার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জন্য আছ। হি হ্যাজ সিলেকটেড ইউ ফর মি।
আমি চুপ করে থাকলাম। বিপাশাও। অনেক পরে বললো, অনেস্টলি বললে সৈয়দের পরে আমি তোমাকে ভালোবাসি। ওর কাছে তোমার পুরোটা শুনেছি। অবশ্য একান্তই যদি তুমি না চাও...। যদি কোনো অনুভূতিই না জাগে তোমার। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। আমি বললাম, একটু বসুন। আমি তার শরীরের দিকে তাকালাম। প্রথম দিনের ঘটনাটি নিমেষে চোখের সম্মুখ দিয়ে ভেসে গেল। কী অবাক, তার সেদিনের সেই যৌনকাতরতা এই প্রথম আমার সংবেদনে এসে ঘা মারলো। তার স্তনের কথা মনে পড়লো। অনুভব করলাম হয়তো আমি তাকে ভালো বাসতেও পারি। আমি তার চুল মুঠো করে ধরে এক পলকা একটা চুমো খেয়ে বসলাম। ওইটুকুতেই তার শারীরিক সম্মতি টের পেলাম।
রেবেকা না লতা না বিপাশা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সৈয়দের বিছানার কাছে গিয়ে হয়তো বললো, হ্যাঁ সে রাজি হয়েছে। এবার তুমি নিশ্চিন্তে মরতে পারো। তারপর আমাকে ডাকতে এলো। হাত ধরে টেনে নিয়ে সৈয়দের বিছানার কাছে দাঁড় করলো। সৈয়দ চোখ মেলে দেখলো আমরা পরস্পর চুমু খাচ্ছি। খুব গাঢ়, অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে। সে জানলো এই প্রথম। তাঁর খুশির জন্যই। কিন্তু, এ দ্বিতীয়বারের ঘটনা। শরীর এভাবেই দূরে সরে যায়। অবশ্য খুব বেশি দূর যেতে পারে কি? তার কষ্ট দেখেই কিনা জানি না আমি ও রেবেকা না বিপাশা না লতা তার আশু মৃত্যু কামনা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হলো। খুবই কষ্টকর এবং বেদনাদায়ক এক মৃত্যু। আমাদের গোপন পার্টির একজন কমরেডের প্রস্থানে আমরা শোকাহত হলাম।